রাজউকের পিয়ন ইসমাইলের ঘুষের টাকায় গাড়ি বাড়ি ফ্লাট সহ শত কোটি টাকার সম্পদ নিজ গ্রামে অবৈধ অর্থে নির্মাণ করেছেন মসজিদ মাদ্রাসা
রাজউকের পিয়ন ইসমাইলের ঘুষের টাকায় গাড়ি বাড়ি ফ্লাট সহ শত কোটি টাকার সম্পদ নিজ গ্রামে অবৈধ অর্থে নির্মাণ করেছেন মসজিদ মাদ্রাসা
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক যেন স্বর্ণের খনি ঝাড়ুদার পিয়ন থেকে শুরু করে বহু কর্মকর্তা কর্মচারী শূন্য থেকে বনে গেছেন ঘুষ দুর্নীতির টাকায় শত শত কোটি টাকার মালিক, বিভিন্ন সময়ে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে জমা হলে তা অদৃশ্য কারণে আলোর মুখ দেখেনা, রাজউকের অফিস সহায়ক ইসমাইল হোসেন ঘুষ দুর্নীতির টাকায় মালিক হয়েছেন শত শত কোটি টাকার, তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও আছেন এখনো বহাল তবিয়তে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানাধীন নয়াদিল গ্রামের রিক্সা চালকের ছেলে মোঃ ইসমাইল মিয়া ঝাড়ুদার হিসেবে ২০০৮ সালে রাজউকে যোগ দিয়েছিলেন মো. ইসমাইল হোসেন মিয়া। পরবর্তীতে অবৈধ অর্থ দিয়ে পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন অফিস সহায়ক। রাজউকে যোগদানের পর গত ১৬ বছরে ঘুষ দুর্নীতি করে কামিয়াছেন শত শত কোটি টাকা।
তার ঠাট-বাট, চলন-বলনে রাজকীয় পরিবর্তন হয়েছে। তার সম্পদ এতোটাই বেড়েছে যে গ্রামের লোকজন তাকে রাজউকের বড় পদের কর্মকর্তা হিসেবে জানেন। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম করে টাকা কামানোর কারনে কাউকে মানুষ বলে মনে করেন না ইসমাইল। গেল ৪ বছরে তার নামে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে। তবে; কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয় ন অদৃশ্য কারণে।
২০২১ সালের ৩১ মার্চ ইসমাইল মিয়ার নামে প্রথম দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে। নাম, পরিচয় ও স্বাক্ষরহীন ওই অভিযোগপত্রে ইসমাইলের অর্থ-বিত্ত-সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করে দ্রুত তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন অভিযোগকারী।
এরপরে নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ইসমাইলের নামে দুদকে দায়ের করা অপর এক অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, “রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পিয়ন ইসমাইল মিয়ার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে দুদকে পর পর দুইটি লিখিত অভিযোগ দাখিল স্বত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে অদ্যাবধি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যে কারণে ইসমাইল মিয়া আরও বেপরোয়া হয়েছে। সে নিজেকে রাজউকের হর্তা-কর্তা ভাবে।
দুদকের অভিযোগে ও একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ইসমাইল মিয়ার সম্পদের বিবরনে উল্লেখ ছিল ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানাধীন নয়াদিল গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইসমাইল মিয়া একজন রিক্সা চালকের ছেলে হয়েও রাজউকে চাকরি করে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। তার পিতার নাম মোঃ হারেছ মিয়া। রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকায় ব্লক-এ, রোড নং-৪, বাড়ি নং-২৮ এ স্ব-পরিবারে বসবাস করেন ইসমাইল। মালী হিসেবে রাজউকে চাকরি জীবন শুরু করে বর্তমানে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত আছেন তিনি। তবে তার চলাফেরা আর দাপট দেখে মনে হবে তিনি বড় পদের কোন কর্মকর্তা। রাজউকের যেকোন অবৈধ কাজ টাকা দিলে মুহূর্তেই সে বৈধ করে দেয়। রামপুরা, বনশ্রীসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে তার ৭/৮টি ফ্ল্যাট আছে। নামে-বেনামে রাজধানীর পূর্বাচলসহ তার গ্রামের বাড়িতে ৫ তলা ফাউন্ডেশনসহ ২টি বাড়ী ও জমি রয়েছে। তার নিজস্ব প্রাইভেটকার রয়েছে। একাধিক মোটর সাইকেল ব্যবহার করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে কোটি টাকা মূল্যের একটি দিঘি ক্রয় করেছেন। এছাড়াও প্রায় ৩০ লক্ষ্য টাকা ব্যয় করে একটি অটো রিক্সার শো-রুম করেছেন।’
২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি ইসমাইল মিয়ার নামে দুদকে আরও একটি অভিযোগ করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মো. রাসেল মিয়া। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- ‘ইসমাইলের বাবা পেশায় ছিলেন রিকশাচালক। দুর্নীতির দায়ে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়া রাজউকের এক কর্মচারীর হাত ধরে সেখানে মাস্টাররোলে চাকরি পান ইসমাইল। এরপর তিনি গ্রামে পুরনো বাড়ির কাছে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করেন। ইসমাইলের রয়েছে একটি প্রাইভেট কার ও দুটি মোটরসাইকেল। ঢাকার বনশ্রীর এ-ব্লকে একটি, বনানীতে একটি, ভূঁইয়াপাড়ায় দুটি ও নন্দীপাড়ায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে দুটি দোকান ও কক্সবাজারে একটি হোটেলের শেয়ার রয়েছে তার। এছাড়া স্ত্রী, শ্বশুরসহ নামে-বেনামে অনেক সম্পত্তি রয়েছে। আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নান্নু মিয়ার বাড়ি কেনার জন্য তিনি ৫০ লাখ টাকা বায়না করেন, যা পরে ফেরত নেন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামে মো. ইসমাইল হোসেন মিয়ার কোটি টাকার বাড়ি।
ইসমাইলের বাড়ী নয়াদিল গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘মানুষ হিসেবে ইসমাইল বেশ ভালো। যেকোনো প্রয়োজনে তিনি গরিব-দুঃখীদের টাকা দিয়ে সহায়তা করেন।’ পুকুরপারে নির্মাণাধীন মসজিদটি দেখিয়ে তিনি বলেন, এই মসজিদটি নির্মাণে তিনি প্রায় এক কোটি টাকা দিয়েছেন ও পাশের মাদ্রাসাতেও করে দিয়েছে তিনি খুব ভালো মানুষ এলাকায় যে কারো বিপদে তিনি সহায়তা করেন তবে তারা সবাই মনে করে তিনি রাজউকের উচ্চপদস্থ কোন কর্মকর্তা।
ইসমাইলের নয়াদিলের দোতলা বাড়ির নিচতলায় ‘ব্যাটারি মেলা অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইজি বাইকের শোরুম’ আছে।
ইসমাইলের এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইসমাইল হোসেন। এ বাড়ির একটু দূরে ইসমাইলের পুরনো বাড়ি। আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের সামনেও রয়েছে একই ধরনের প্রতিষ্ঠান।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, সামান্য পিয়ন পদের একজন কর্মচারী ইসমাইল মিয়ার স্বেচ্ছাচারিতা, ঘুষ-দুর্নীতি এক কথায় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সে কাউকেই তোয়াক্কা করে না। তার চলাফেরা, হাব-ভাব দেখলে মনে হয় সে রাজউকের বড় কোন কর্মকর্তা! রাজউকে যোগদানের মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই বাড়ী-গাড়িসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক মোঃ ইসমাইল মিয়া।
রাজউকের একাধিক পরিচালক ও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এই ছেলেটা অনেক বেয়াদব ও অর্থের বিনিময়ে সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলেন যার কারণে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোন কার্যকর শাস্তি মূলক ব্যবস্থা হয়নি।
এসব বিষয়ে ইসমাইল হোসেন মিয়ার মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স